ভোলায় দুর্নীতিবাজ সিভিল সার্জন এর কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে
দুর্নীতিবাজ সিভিল সার্জনের কারণে ঝুঁকিতে আছে ভোলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। বর্তমানে দুর্নীতি করে স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাটাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছ ভোলার সিভিল সার্জন ডাঃ কেএম শফিকুজ্জামান। দীর্ঘদিন ভোলায় থাকার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক ভুক্তভোগী এমন অভিযোগ রয়েছেন।
ভোলা জেলায় প্রায় ৫০ এর বেশি রয়েছে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক। এদের বেশির ভাগই আনফিট, ১০ বেডের হাসপাতাল/ক্লিনিক করতে হলে ৩জন এমবিবিএস, আবাসিক ডাক্তার ও ৬ জন ডিপ্লোমা নার্স থাকার কথা থাকলেও কিছুই নেই প্রায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। ডাক্তার ও নার্স এর কাজ করে আয়া বুয়া দিয়ে। আর প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ রোগীরা। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে মাসোহারা নিচ্ছে সিভিল সার্জন ডাঃ কেএম শফিকুজ্জামান।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, প্রাইভেট হাসপাতাল/ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো প্রতি বছরই লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে ডিজি হেলথে আবেদন করতে হয় লাইসেন্স নবায়ণ করার জন্য। ডিজি হেলথদ সিভিল সার্জনের কাছে পাঠান তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। ডিজি হেলথ থেকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলেও গত বছরের রিপোর্ট এবছরও ছাড়েনি অনেক হাসপাতালের। তদন্ত কমিটির তিন সদস্য থাকলেও বাকি দুই জনের বিরুদ্ধে দূর্নীতির কোন অভিযোগ না থাকলেও দূর্নীতির একাধিক প্রমাণ রয়েছে বর্তমান সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে।
ভোলার সিভিল সার্জন অফিসের একাধিক স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই সিভিল সার্জন ভোলায় যোগদানের পর থেকেই ভোলার স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশা। প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক থেকে যেভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এজন্যই ভোলার স্বাস্থ্য সেবা হুমকির মুখে। সিভিল সার্জন অফিসের মোঃ মনির তার এই দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় শাস্তিমূলক তাকে বোরহানউদ্দিনে পাঠানো হয়েছে বলে অনেকে যানায়। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি তার এই দূর্নীতির প্রতিবাদের চেষ্টা করে তাকে হয়রানিমূলক ভোলা সদর থেকে অন্য উপজেলায় পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে বর্তমান সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে।
বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একাধিক মালিকরা জানায়, সম্প্রতি সরকার বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর তালিকা করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই লাইসেন্স করতে মরিয়া হয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ছুটছেন সিভিল সার্জন অফিসে। আর এই ঘোষণাকে কাজে লাগিয়ে সুযোগ সন্ধানী সিভিল সার্জন নেমেছেন ঘুষ বাণিজ্যে, লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। নতুন লাইসেন্স জন্য গেলে অফিস খরচ, সিভিল সার্জনের পরিদর্শন খরচ ধরে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। আবার অনেকেই তার চাহিদা মেটাতে না পাড়ায় তাদের হাসপাতালের গত বছরের প্রতিবেদন রির্পোট এখন পর্যন্ত আটকিয়ে রাখা হয়েছে সিভিল সার্জন অফিসে। উল্লেখ্য আছে যে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলেও আইনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে যাচ্ছে সিভিল সার্জন ডাঃ কেএম শফিকুজ্জামান।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভোলা জেলায় বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১১০টিও বেশি। কিন্তু সরকার ঘোষিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের ভয়ে লাইসেন্স গ্রহণের আবেদন করছে বেশিরভাগ প্রাইভেট/ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই সরকারি নিয়মনীতি পুরোপুরি অনুসরণ না করায় অনুমোদন পাওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান। তাই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাওয়ার সংকট উপায় খুঁজছে। এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে সিভিল সার্জন।
এ বিষয়ে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কেএম শফিকুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকের কাছে কোন কথা বলতে রাজি না। আপনারা যা ইচ্ছা লেখেন, এতে আমার কিছু আসে যায় না। তিনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আমি চাইলে এখন আপনাদেরকে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে আটক করতে পারি। ভোলার পুলিশ কর্মকর্তা নাকি সিভিল সার্জনের বন্ধু।
ভোলার সচেতন মহলের দাবি এই সিভিল সার্জন ভোলায় যোগদানের পর থেকেই ভোলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হুমকির মুখে, সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে যায় একটু ভালো চিকিৎসা নেয়ার আসায়। কিন্তু তার একটু দুর্নীতির কারণে চিকিৎসা দেয় আয়া বুয়ারা, সেখানেও রীতিমতো প্রতারীত হচ্ছে সাধারণ রোগীরা, তাই ভোলার সিভিল সার্জন ডাঃ কেএম শফিকুজ্জামানের পরিবর্তনের মাধ্যমে ভোলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় ভোলার মানুষ।
জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন এবং যাতে এধরনের কোন দূর্নীতি না হয় সেদিকে প্রশাসনের নজর থাকবে।
এদিকে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের উপপরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, তদন্ত করে অভিযোগ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।