দিল্লিতে ট্রুডোর উড়োজাহাজে ‘নাশকতার’ অভিযোগ, মন্তব্য করলেন না প্রতিরক্ষামন্ত্রী
জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লিতে এলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বিশ্বের শিল্পোন্নত ও ধনী অর্থনীতির জোট জি–২০–এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের নয়াদিল্লি সফর করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তবে নির্ধারিত সময়ে দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। উড়োজাহাজে ত্রুটির কারণে সফরসঙ্গীসহ অতিরিক্ত ২৪ ঘণ্টা তাঁকে ভারতে কাটাতে হয়। এ ঘটনা উড়োজাহাজাজের ‘কারিগরি ত্রুটি’ নাকি ‘নাশকতা’—এমন প্রশ্ন উঠেছে।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিল ব্লেয়ারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গেছেন তিনি। তবে বলেছেন, ‘এই বিষয়ে আমি এখন কোনো মন্তব্য করব না। তবে এটি নিয়ে এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে।’
এমন একসময়ে জাস্টিন ট্রুডোকে বহনকারী উড়োজাহাজে (কানফোর্সওয়ান নামে পরিচিত) ‘নাশকতার’ সন্দেহ করা হচ্ছে, যখন কানাডা ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। মূলত কানাডার মাটিতে খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যার জেরে দুই দেশের বিরোধের শুরু। কানাডা সরকারের দাবি, এর পেছনে ভারতের হাত রয়েছে। আর এর সপক্ষে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ও পাওয়া গেছে।
তবে কানাডার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারত। এর জেরে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে দুই দেশ। এমনকি ভারতের পক্ষ থেকে কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন সময়ে ট্রুডোর উড়োজাহাজে নাশকতার সন্দেহ চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন।
কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিল ব্লেয়ারের ওই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাঁর প্রেস সেক্রেটারি ড্যানিয়েল মিনদেন। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে বহনকারী উড়োজাহাজে নাশকতার চেষ্টা করা হয়েছিল, কানাডার পক্ষ থেকে এমনটা বিশ্বাস করার কারণ নেই।
তবে এমন সন্দেহের কথা জানিয়ে কানাডার সংবাদমাধ্যম গ্লোব অ্যান্ড মেইলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক স্টিভেন চেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন। অবশ্য এ–ও বলা হচ্ছে, এমন গুরুতর একটি অভিযোগ জানানোর জন্য স্টিভেন অতটাও গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলেন না।
অন্যদিকে কানাডা সরকার চায়নি, শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যায় ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাক। তাই গত সোমবার এ বিষয়ে ভারতের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ সামনে আনে কানাডা। কেননা, সাংবাদিক স্টিভেন ও সাংবাদমাধ্যম গ্লোব অ্যান্ড মেইলের অটোয়ার ব্যুরোপ্রধান রবার্ট ফিফে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন।
যা–ই হোক, দিল্লিতে আটকা পড়া অবস্থায় নিজেদের উড়োজাহাজে ট্রুডোকে দেশে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত সরকার। তবে কানাডা তাতে রাজি হয়নি। বরং দেশ থেকে প্রকৌশলী পাঠিয়ে উড়োজাহাজ ঠিকঠাক করার পর ট্রুডো ও তাঁর সফরসঙ্গীদের কানাডায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
কানাডা সরকার জানিয়েছে, দিল্লি সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কানাডায় শিখ নেতা খুনের পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগ জানিয়েছেন ট্রুডো। অন্যদিকে এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত।